শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সহ বিভিন্ন উপজেলায় রবি মৌসুমে বেরেছে সরিষার আবাদ। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেখা দিচ্ছে সম্ভাবনার হাতছানি।শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন,সিন্দুরখান,সাতগাঁও,ভূনবীর ইউনিয়ন সহ প্রত্যেক এলাকার গিয়ে দেখা যায় বোর ধানের পাশা পাশি পতিত জমিতে চাষ করা হয়েছে রবি ফসল সরিষা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায় চলতি বছরে সরিষার ফলন ভালো হবে। এবছর সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে সরিষা। প্রতি হেক্টরে ১.৪ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানিয়েছেন, ২০২১ সালে শ্রীমঙ্গলে ৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এবছর ১০২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা চাষের জন্য সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের সরিষা চাষে অনুপ্রাণিত করছি। আমন ও বোরো আবাদের মধ্য সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলেই কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সরিষা চাষের পাশাপাশি মৌ চাষে মৌমাছির কারণে পরাগায়নে প্রায় ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়ে থাকে। তাই সরিষা চাষের সঙ্গে মৌ চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। এক সময় অধিকাংশ মানুষ সরিষার তেল দিয়েই বিভিন্ন খাবার রান্না করে খেত। সে সময় মানুষের শরীরে রোগও কম হতো। কালের বিবর্তনে কৃষক পর্যায়ে সরিষার আবাদ হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার সয়লাভ করে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থের অপচয় করছেন।
এতে সরিষার দাম কমে যায়। ফলে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষকের লাভজনক কৃষি উৎপাদনের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ১৪,১৫ও ১৮ উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বারি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে এক ইঞ্চি জায়গাও যেন পতিত না থাকে। তারই নির্দেশে নতুন নতুন জাত আবিষ্কারের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বাড়াতে নিরলস কাজ করছি। আমরা জানি যে সিলেট অঞ্চলে এক ফসলি জমি বেশি। এক ফসলি জমিকে কিভাবে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করা যায় এরই প্রচেষ্টা চলছে।
আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত সরিষা ১৮-এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ জাতের তেলে ইরোসিক এসিডের পরিমাণ একেবারেই সামান্য, যা শতকরা ০.৫ ভাগ।
এ জাতটি জনপ্রিয়তা পেলে অনেকেই আবারো সয়াবিন বা পাম তেলের পরিবর্তে সরিষা তেলকে ভোজ্য তেল হিসেবে গ্রহণ করবেন। এ জন্যই বারি হাওরাঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বাড়াতে চেষ্টা চলছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।